ইটভাটায় কোটি টাকার ফুলের সৌরভ

লক্ষিপুর সংবাদদাতা: আনোয়ার হোসেন ও মোর্শেদ দুই ভাই। লক্ষ্মীপুরের ভবানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা। তাদের প্রবল ইচ্ছাশক্তিতে ফুল ফুটেছে একযুগ ধরে পড়ে থাকা বাড়ির পাশের ইটভাটায়। স্বল্প পুঁজি নিয়ে শুরু করা দুই ভাইয়ের মালিকানাধীন ‘আনোয়ার নার্সারি’তে এখন কোটি টাকা আয়ের হাতছানি দিচ্ছে।

সবুজে ঘেরা নার্সারিতে বর্তমানে ফুল, ফল ও ঔষধি গাছের ব্যাপক সমাহার রয়েছে, যা মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করছে স্থানীয় বাসিন্দা, ক্রেতা ও নতুন উদ্যোক্তাদের। এখানে কাজ করে ১০ জন শ্রমিকেরও সংসার চলছে। স্থানীয় প্রশাসনও এই সফল উদ্যোক্তাদের আরও সফলতা কামনা করেন। একইসঙ্গে নার্সারির মালিকদের সরকারি-বেসরকারি ঋণ সুবিধাসহ যাবতীয় সহায়তার আশ্বাস দেয় প্রশাসন।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কের ভবানীগঞ্জ এলাকার ওয়াপদা অফিস সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত আনোয়ার নার্সারি। সদরের উত্তর তেমুহনী থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে এখানে যেতে গাড়ি যোগে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরি ছেড়ে ২০০৯ সালে মোর্শেদ তার বেকার ছোট ভাই আনোয়ারকে সঙ্গে নিয়ে এ ব্যবসা শুরু করেন।

প্রথমে দেড় একর জমি ইজারা নিয়ে ২ লাখ টাকা পুঁজিতে শুরু করেন নার্সারি ব্যবসা। প্রতিদিন এখানে উৎপাদিত বিভিন্ন ফুল, ফল ও ঔষধি গাছ বিক্রি করে ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হয় দুই ভাইয়ের। ব্যায়ের তুলনায় আয় দ্বিগুণ হওয়ায় বর্তমানে তাদের পুঁজি দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ টাকায়। সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে ব্যবসার আরও প্রসার ঘটতো বলে জানান সফল এই নার্সারির মালিক।

নার্সারিতে ফলের মধ্যে ড্রাগন, ডুমুর, ব্ল্যাকবেরি, মালবেরি, রাম ভূটান, পাসিমন, স্ট্রবেরি পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের আম, জাম, ডালিম, আনার, আপেল, মাল্টা, কমলা, থাই জাম্বুরা, পেঁপে, সফেদা, আমলকি, বেল ও কাশমেরী কূলসহ নানা জাতের শতাধিক দেশি-বিদেশি ফল গাছ রয়েছে। এসব গাছের মূল্য ৫০ টাকা থেকে ৬০০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। ফুলের মধ্যে ইন্ডিয়ান কেনা, জাপানি চেরি ফুল, চাইনিজ টগর, করবী, ভেলভেটসহ নানা জাতের দেশি-বিদেশি ফুলের চারা। এছাড়া নানা জাতের কাঠ ও ঔষধি গাছের চারা রয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে এসব গাছের বিশাল ভাণ্ডার দেখতে ও কিনতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন সৌন্দর্য ও গাছ প্রেমীরা। তারাও এখানে এসে মুগ্ধতার কথা প্রকাশ করে স্বল্পমূল্যে গাছ কেনার কথা জানান।

এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, আনোয়ার নার্সারি এ এলাকার জন্য একটি দৃষ্টান্ত। নার্সারিটি দেখে বেকার যুবকরা আগ্রহী হয়ে উঠছেন। এখানে একসময় আগুন জ্বলতো। কাঠ পোড়া গন্ধে ও ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হতো। এখন অক্সিজেনেরও কমতি নেই; আশপাশে বিশুদ্ধ বাতাস। সজীব-সতেজ জীববৈচিত্র। ফুটেছে হাজার হাজার ফুল। ছড়িয়েছে সৌরভ।

ইটভাটাটি বন্ধ হওয়ায় এমন উপহারের সমারহ হয়েছে। ভাটার জমিতে এখন নার্সারি। তাতে আছে ফুল, ফল ও ঔষধি গাছসহ নানা প্রজাতির বৃক্ষের চারা। বিভিন্ন ফুল-ফল গাছ। সবুজে সবুজে ভরে গেছে পুরো মাঠ। ফুলে ফুলে বসছে মৌমাছি-প্রজাপতি; রাতে হয় জোনাকির খেলা।

কথা হলে নার্সারির মালিক আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রায় ১৬ বছর আগে রাস্তার পাশে গড়ে উঠেছিল ইটভাটা। বিভিন্ন প্রতিকূল পরিস্থিতি ও পর্যাপ্ত মাটির অভাবে ইট পোড়া বন্ধ রয়েছে। এখন এখানে পরিকল্পিতভাবে নার্সারি গড়ে তোলা হয়েছে। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আরও ভালো কিছু করা যেত বলে জানান তিনি।

এদিকে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম বলেন, দুই ভাইয়ের উদ্যোগে গড়ে ওঠা সফল আনোয়ার নার্সারির আরও সমৃদ্ধি ও সফলতা কামনা করছি। একইসঙ্গে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা, ঋণ সুবিধাসহ যাবতীয় সহায়তার ব্যাপারে আশ্বাস দেন এ কর্মকর্তা।