ইজারা টার্মিনালের, টোল মার্কেটে!

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ফুলবাড়িয়া স্টপ ওভার টার্মিনালের ইজারাদারের বিরুদ্ধে আশপাশের মার্কেট থেকে টোল আদায়ের অভিযোগ করেছেন ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা। এ নিয়ে সম্প্রতি তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভও করেছেন।

তারা বলছেন, ইজারাদার টার্মিনাল ইজারা নিলেও তারা দোকানপাটের মালামাল থেকেও টোল আদায় করছে। তবে ইজারাদারের দাবি, যারা এই অভিযোগ করেছেন তারা আগেও টোল দিতেন। তবে আগে অবৈধভাবে যারা আদায় করতো তাদেরকে এই টোল দেওয়া হতো।

জানা গেছে, গত ১৪ অক্টোবর হতে এক বছরের জন্য দুই কোটি ২৫ লাখ টাকায় ডিএসসিসির মালিকানাধীন ফুলবাড়িয়া স্টপ ওভার টার্মিনালটি ইজারা নেয় মিনহাজ এন্টারপ্রাইজ। ইজারার শর্ত অনুযায়ী ইজারাদার টার্মিনালের আওতাভুক্ত গুলিস্তান-মিরপুর ১, ৯, ১০, ১১ ও ১২, চিড়িয়াখানা, এয়ারপোর্ট, আব্দুল্লাহপুর, ধামরাই, মানিকগঞ্জ, রামপুরা, গাবতলী, কালিয়াকৈর, কালীগঞ্জ, কলাকুপাবান্দুরা, সাভার, নবীনগর, আরিচা (বিআরটিএ কর্তৃক লিজ প্রদত্ত) কাপাসিয়া, গাজীপুর, টঙ্গী, শ্রীপুর, সখীপুর, শ্রীনগর, দোহার ও বাড়ৈখালী রুটে চলাচলকারী বাস মিনিবাস প্রতি প্রতিদিন ৪০ টাকা হারে টার্মিনাল ফি ও নির্ধারিত কুলি মজুরি আদায় করবে। নির্ধারিত স্থান ও রুট ছাড়া অন্য কোনও স্থান বা রুটে রাজস্ব আদায় করা যাবে না। অটোরিকশা সিএনজি হতে প্রতি ট্রিপে ১০ টাকা ও টেম্পো হতে ৩০ টাকা হারে আদায় করা যাবে। কার্যাদেশে পরিবহনের নামও উল্লেখ করে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে। তবে পরিবহন থেকে আদায়কৃত টোলের পরিমাণও বাড়ানো হয়েছে।

ইজারার শর্ত অনুযায়ী কোনও যাত্রী সামান্য মালামাল উঠানো বা নামানোর জন্য কুলিদের সাহায্য না চাইলে কোনও কুলি উক্ত মালামাল স্পর্শ করা বা মজুরি দাবি করতে পারবে না। যাত্রীসাধারণের সঙ্গে কোনও কুলি বা আদায়কারী কোনও প্রকার দুর্ব্যবহার, অশালীন উক্তি, জোরপূর্বক অর্থ আদায় করা যাবে না।

কিন্তু আশপাশের ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ইজারাদার টার্মিনাল বুঝে নেওয়ার পর থেকেই তারা দোকানপাটের সামনে থেকে টোল আদায় করছে। তাদের দাবি কোনও ব্যবসায়ী যদি তাদের গোডাউন থেকে মালামাল নিয়ে দোকানে নেয় সেখান থেকেও টোল আদায় করা হচ্ছে। এ অভিযোগে গত ২০ অক্টোবর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন বঙ্গবাজারের ব্যবসায়ীরা।
রিয়াদ হোসেন নামে এনেক্স টাওয়ারের একজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করে বলেন, আমার কাছে ১০টি কার্টনের বিপরীতে ৫০ টাকা করে ৫০০ টাকা চাঁদা চেয়েছে। আমি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমাদের বলে, এটা আমরা মেয়রের কাছ থেকে টেন্ডার নিয়েছি। মার্কেটে যত মাল ঢুকবে এবং যত মাল বের হবে, টাকা দিতে হবে। আমরা তাদেরকে বলেছি, তাহলে মেয়র সাহেব আমাদের চিঠি দেবেন, তারপর আমরা দোকান থেকে চাঁদা দেবো। এরপর তারা কয়েকজন এসেছে, আমাদের তুলে নিয়ে যেতে চেয়েছে।

রিয়াদ হোসেন চাঁদার রশিদ দেখিয়ে বলেন, এখানে স্পষ্ট লেখা আছে তারা যানবাহনের টোল নেবেন। কিন্তু তারা আমাদের প্রতিটি বস্তা ও কার্টন থেকে মার্কেটে ঢুকতেও ৫০ টাকা ও বের হতেও ৫০ টাকা করে নেয়। অথচ আমরা লাভই করি ৫০ টাকা। এর মধ্যে ১০০ টাকা দিলে আমাদের থাকবে কী?

ব্যবসায়ীরা জানান, কোনও ক্রেতা মার্কেট থেকে কোনও কিছু কিনে নিলেও তাদের চাঁদা দিতে হচ্ছে। মার্কেটে একটা মালের বান্ডেল নিয়ে যেতে হলে তাদেরকে টাকা দিতে হয়। বের করলেও টাকা দিতে হয়। গোডাউন থেকে আনলেও টাকা দিতে হয়। টাকা না দিলে ব্যবসায়ীদের গালমন্দ করে, মারতে যায়, হুমকি দেয়। যে গ্রাহকের কোনও কুলির প্রয়োজন নেই সে কেন কুলি মজুরি বাবদ টাকা দেবে? ইজারার শর্তেও এটা বলা আছে যদি যাত্রীর কুলির প্রয়োজন না হয় তার কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় করা যাবে না।

জানতে চাইলে টিটু বলেন, দীর্ঘ ৮ বছর সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বন্ধ ছিল। কিছু লোক এটা নিয়ন্ত্রণ করতো। বর্তমান মেয়র সাহেব টেন্ডার শিডিউল কল করার পর আমরা টেন্ডার ড্রপ করি। এখন আমরা রাজস্ব আদায় করছি। আমাদের পাঠাইছে সিটি করপোরেশন। আমরা মেয়রকে বিষয়টি অবহিত করেছি। তিনি হয়তো ব্যবসায়ীসহ সবার সঙ্গে বসে এটা সমাধান করবেন।