আলুবীজের সংকটে দাম বাড়তি

আলুবীজের সংকটে দাম বাড়তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: আলুবীজ সংগ্রহের জন্য লাইন দিতে হচ্ছে কৃষকদের। এ সুযোগে বাড়তি দাম নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলুর দাম বেশি পেয়ে এ বছর মৌসুমের শুরু থেকে আলু চাষের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছেন জয়পুরহাটের আলু চাষিরা। উন্নত জাতের আলুবীজ সংগ্রহে তারা ভিড় করছেন বীজ ব্যবসায়ীদের প্রতিষ্ঠানে। ব্যাপক চাহিদার সুযোগে নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি মূল্যে বীজ বিক্রি করছেন বীজ ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় আলুর উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার শঙ্কায় পড়েছেন কৃষকরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটে এবার আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার ৫০০ হেক্টর। ধান কাটার পর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় এবার ব্যাপকভাবে আগাম আলু চাষের প্রস্তুতি শুরু করেছে কৃষকরা। কিন্তু, শুরুতেই বীজ সংগ্রহে চরম সঙ্কটে পড়েছে তারা। বীজ সঙ্কটের কারণে বর্তমানে বাজারে ব্র্যাকের সরবরাহকৃত ৪০ কেজির প্রতি বস্তা অ্যাস্টেরিক, ক্যারেজ ও ডায়মন্ড জাতের আলুবীজ জেলার বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকায়। অগ্রিম টাকা দিয়েও বীজ পাচ্ছেন না কৃষকরা। অথচ কোম্পানির নির্ধারিত ডিলারদের ‘এ’ গ্রেড আলুবীজ প্রতিমণ ২ হাজার ২০০ টাকা এবং ‘বি’ গ্রেড ২ হাজার ৮০ টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু, চাহিদার কারণে বাজারে সঙ্কটের অজুহাতে ইচ্ছেমতো দাম নিচ্ছেন বীজ ব্যবসায়ীরা।

জেলার বিভিন্ন বাজার ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বৃষ্টি না হওয়ায় এবার আগাম আলু চাষে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে কৃষকরা। ফলে গত মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই বীজের চাহিদা দেখা দিলে বাজারে সবার আগে বীজ সরবরাহ করে ব্র্যাক সিড অ্যান্ড অ্যাগ্রো এন্টারপ্রাইজ। ফলন ভালো হওয়ায় এবার ব্র্যাকের আলুবীজ পছন্দের তালিকায় এক নম্বরে থাকায় বীজ সংগ্রহে ব্র্যাক অনুমোদিত ডিলারদের ঘরে ভিড় জমান আলু চাষিরা।

ক্ষেতলাল উপজেলার আয়মাপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করেন, কোম্পানির নির্ধারিত মূল্যে ইটাখোলা বাজারে খুচরা বীজ ব্যবসায়ীর কাছে অগ্রিম টাকা দিয়েও তিনি ব্র্যাকের আলুবীজ সংগ্রহ করতে পারেননি। পরে বেশি দামে তাকে আলুবীজ কিনতে হয়েছে। বাঘাপাড়া গ্রামের কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, ৭৫ বস্তা বীজ আলুর অগ্রিম টাকা জমা দিয়ে তিনি ২৩০০ টাকা দরে ৫০ বস্তা আলু পেয়েছেন। আক্কেলপুরের সোনাই মাগুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, বীজের পাশাপাশি সারের দামও বেশি। এতে এবার এক বিঘা জমি চাষ করতে তাদের উৎপাদন খরচ পড়ছে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা।

ক্ষেতলাল উপজেলার নিশ্চিন্তা বাজারের খুচরা বীজ ব্যবসায়ী মুর্শিদুল আলম পলাশ বলেন, এবার বেসরকারি কোম্পানিগুলো শুধুমাত্র তাদের অনুমোদিত ডিলারদের কাছে বীজ সরবরাহ করলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এক্ষেত্রে কৃষকদের চাহিদার কারণে তার মতো খুচরা বীজ ব্যবসায়ীরা কম চাহিদার জেলাগুলো থেকে বীজ সংগ্রহ করে এনে বিক্রি করছেন। এতে দাম কিছুটা বেশি হলেও সময়মতো বীজ পেয়ে কৃষকরা খুশি।

ক্ষেতলালের চৌমুহনী বাজারের ব্র্যাকের বীজ ডিলার মেসার্স ফারদিন ট্রেডার্সের মালিক শাহজামান তালুকদার বলেন, হাজার টন বরাদ্দ দিলেও কোম্পানি থেকে তাকে ৯৫০ টন সরবরাহ করা হয়েছে। যা নির্ধারিত মূল্যে কৃষকদের কাছে তিনি সরবরাহ করেছেন। সঠিক মূল্যে বীজ পাওয়ায় কৃষকরা বেশি ভিড় করছেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ না থাকায় এই বীজই বাজারে অনেক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।

বটতলী বাজারের বিএডিসির অনুমোদিত বীজ ডিলার দুলাল মিয়া বলেন, প্রতি বছর তিনি কৃষকদের কাছে বিপুল পরিমাণ বীজ বিক্রি করেন। কিন্তু, এবার বিএডিসি বীজ আলু কিছুটা দেরিতে বাজারে সরবরাহ করায় বীজের ব্যাপক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তাদের চাহিদা মেটাতে কম উৎপাদন হওয়া জেলাগুলো থেকে তিনি বেশি দাম দিয়ে বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের চাহিদা মেটাচ্ছেন।’

বিএডিসি’র বীজ বিপণন বগুড়া ও জয়পুরহাট অঞ্চলের উপপরিচালক শহিদুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিভিন্ন জাতের ‘এ’ গ্রেড আলুবীজ প্রতিমণ ১ হাজার ৮৮০ এবং বি গ্রেড ১ হাজার ৮৪০ টাকা কৃষকের কাছে বিক্রির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। জেলায় মোট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ডিলার পর্যায়ে ১ হাজার ৮০০ এবং কৃষক পর্যায়ে ৪০০ টন। গত শনিবার থেকে বাজারে বিএডিসি আলুবীজ সরবরাহ করা হয়েছে। ভালো মানের কারণে বিএডিসির আলুবীজের যে পরিমাণ চাহিদা মজুত না থাকায় তা সরবরাহ করা যায় না। তবে আগামীতে বরাদ্দ বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক স. ম. মেফতাহুল বারি বলেন, জয়পুরহাটে এ বছর আলুবীজের সম্ভাব্য চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার টন। যার মধ্যে শুধু বিএডিসি আলুবীজের চাহিদা ১৩ হাজার ৭০০ টন। কিন্তু, বাজারে সেই পরিমাণ আলুবীজের সরবরাহ নেই। এজন্য আলুবীজের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে।