আমের রপ্তানি বাড়াতে তিন জেলায় পরিশোধন কেন্দ্র হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: আম উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের আম বিদেশে বেশ জনপ্রিয়ও বটে। সে জন্য এই ফলের রপ্তানি বাজার বাড়াতে তিনটি জেলায় একটি করে ‘ভেপর হিট ট্রিটমেন্ট’ (ভিএইচটি) প্ল্যান্ট তথা পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপন করতে যাচ্ছে সরকার। চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী ও সাতক্ষীরা জেলায় বসবে ভিএইচটিগুলো।

গুণগত মান নিশ্চিত করতে পারলে আমের রপ্তানি বাজার বাড়ানো যাবে। আর ভিএইচটি বসানো হলে আমের অপচয় ১০ শতাংশ কমবে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ভিএইচটি প্ল্যান্ট বসানোর আলোচনা প্রথম শুরু হয় দেড় বছর আগে। বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তার দেশে আম নেওয়ার প্রস্তাব দেন। আমের গুণগত মান নির্ধারণে তখনই ভিএইচটি প্ল্যান্ট নিয়ে আলোচনা হয়। সে আলোকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন তিন সংস্থা- কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- আলাদাভাবে তিনটি পরিশোধন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।

বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদন হলেও উপযুক্ত প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে প্রচুর আম নষ্ট হয়। যে সময়ে আম সংগ্রহ করা হয়, তখন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা দুটোই বেশি থাকে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে বর্তমানে ৩০টি জেলায় আমের চাষ হচ্ছে। তবে ফলন সবচেয়ে বেশি হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও সাতক্ষীরায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবেই, দেশে আমের উৎপাদন ২৪ লাখ টনের মতো। বাস্তবে যদিও উৎপাদন আরও অনেক বেশি। সরকারী হিসেবেই আমের বাজারের আকার কমপক্ষে ১৪ হাজার কোটি টাকার। উৎপাদন থেকে শুরু করে বিপণন, মোড়কীকরণ ও পরিবহন মিলিয়ে বাজারের এই আকার হিসাব করা হয়েছে।

জানতে চাইলে কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে উৎপাদন হলেও উপযুক্ত প্রক্রিয়াকরণ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার অভাবে প্রচুর আম নষ্ট হয়। যে সময়ে আম সংগ্রহ করা হয়, তখন তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা দুটোই বেশি থাকে। এ কারণে উৎপাদিত আমের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ সংগ্রহের সময়ই নষ্ট হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি হলেও উৎপাদনের তুলনায় কম। এসব দিক মাথায় রেখেই ভিএইচটি প্ল্যান্ট করা হচ্ছে। প্ল্যান্টের যন্ত্রপাতি আমদানি করা হবে ইউরোপ থেকে।

এদিকে কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে, যেখানে যেখানে প্ল্যান্ট বসানো হবে, সেসব জায়গা ঠিক হয়ে গেছে। যারা আম রপ্তানি করেন, তারা আম সংগ্রহ করে প্ল্যান্টে নিয়ে আসবেন। সেখানে গরম পানিতে আম শোধন করলে আমের সংরক্ষণ ক্ষমতা যেমন বাড়বে, তেমনি আমের ভেতরে থাকা রোগবালাইও দূর হবে। ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের মধ্যে ফরমালিন ও কীটনাশকের মতো ক্ষতিকারক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। এ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষিত আম আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে, যা আম রপ্তানি বাড়িয়ে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনে সহায়ক হবে।

জানা গেছে, তিনটি ভিএইচটি প্ল্যান্ট বসাতে খরচ হবে ১০০ কোটি টাকা। পুরো টাকাই সরকারের তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে। তবে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও প্ল্যান্ট বসানোর তাগিদ দিয়েছেন পরিকল্পনা কমিশনের (কৃষি ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগ) অতিরিক্ত সচিব মতিউর রহমান। তিনি বলেন, ‘আম রপ্তানি বাড়াতে ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট বসানোর প্রস্তাব আমরা পেয়েছি। আমাদের দেশে এখন বিজ্ঞানভিত্তিক ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে আম পাকানো কম হয়। তাই কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে আম রপ্তানি হয় না। এ কারণে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও প্ল্যান্ট নির্মাণে এগিয়ে আসা উচিত।’

বেশ কয়েক বছর ধরেই ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে আম রপ্তানি হচ্ছে। এসব আম নেন প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা। উত্তরবঙ্গের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও সাতক্ষীরার চুক্তিভিত্তিক চাষিদের কাছ থেকে আম সংগ্রহের পর মোড়কজাত করে কার্গো বা পণ্য ও যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আম পাঠান রপ্তানিকারকেরা।