‘আমগোর আশা-ভরসা বানে ডুইবা গেছে’

নিউজ ডেস্ক: ‘বেগুন বেইচা আমগোর সংসারের খরচ অয়। বেগুনের চাষ আমগোর ভরসা। এডাও বানে ডুইবা গেছে। অহন ক্যামনে চলুম? বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গেলে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলা সদর ইউনিয়নের নিজ মামদামারী গ্রামের কৃষক আলহাজ মো. হাবিবুর রহমান তাঁর বেগুনের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটানোর সময় এসব কথা তুলে ধরেন।

তিনি জানান, গত বছর ১২ কাঠা জমিতে বেগুনের আবাদ করে চার লাখ টাকা লাভ করেছেন। এবার বন্যার পানিতে ক্ষেত ডুবে সব বেগুনের গাছ মরে গেছে। অল্প একটু জায়গায় বর্ষাকালীন বেগুনের চাষ করেছেন। এই ক্ষেতের গাছও মরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বিষ দিতাছি। যদি কিছু গাছ বাঁচে।’

ছাহেরা খাতুন নামে আরেক কৃষাণি বলেন, গত বছর আট কাঠা জমিতে বেগুন করেছি। প্রায় চার লাখ ট্যাহা অইছিল। এইবার বান আইয়া সব গাছ মরছে। অহন সংসারের খরচ চালানো মেলা কষ্ট অইবো। পোলাপানগরে পড়ালেহার খরচ ক্যামনে দিমু? এমন প্রশ্ন এই উপজেলার ভেলুয়া, খড়িয়াকাজীরচর, গোসাইপুর, কুড়িকাহনীয়া ও তাতিহাটি ইউনিয়নের প্রায় অর্ধশত গ্রামের বেগুনচাষিদের।

জানা যায়, গত দুই সপ্তাহ যাবত টানা বর্ষণ ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসলি জমিসহ প্রায় অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে বন্যার পানিতে ডুবে গেছে সদ্য রোপিত রোপা আমন ধানের ক্ষেত, আমন ধানের বীজতলা, সবজিক্ষেত ও মৎস্য খামার। এর মধ্যে ২০০ হেক্টর জমি বেগুনক্ষেত। এখন বন্যার পানি কমেছে। তবে মরে যাচ্ছে বেগুনের গাছ। এতে ভেসে গেছে বেগুনচাষিদের স্বপ্ন। লোকসানে পড়ে চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

চরশিমুলচূড়া বলদিপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল আলী জানান, কয়েক বছর যাবৎ বেগুনের চাষ করে সংসারের সচ্ছলতা এসেছে। এবার বেগুন বিক্রি করে ঈদের কেনাকাটা করবে। কিন্তু সেই আশা এখন ধোঁয়াশায় পরিণত হয়েছে।

স্থানীয় বেগুন ব্যবসায়ী সাফিজল হক জানান, এই সময় বিভিন্ন লাকা থেকে প্রতি সপ্তাহে প্রায় দেড়শ মণ বেগুন নিয়ে যেত ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। এবার বন্যায় প্রায় সব ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। এতে তাদেরও আয়ের উৎস বন্ধ হয়ে গেছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ হুমায়ুন দিলদার বলেন, এই উপজেলা বিপুল পরিমাণ জমিতে বেগুনের চাষ হয়। স্থানীয়ভাবে বেগুনের চাহিদা মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে বেগুন রপ্তানি হতো। বন্যায় প্রায় ৪০০ হেক্টর আবাদি জমি ও সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে প্রায় ২০০ হেক্টর জমি বেগুনের ক্ষেত। তবে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করে বীজসহ প্রণোদনা দেওয়া হবে।