আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে পিছিয়ে পড়ছে সরকারি ব্যাংকগুলো

নিউজ ডেস্ক:আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেসরকারি ব্যাংকের তুলনায় সরকারি ব্যাংক পিছিয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। প্রতিষ্ঠানটির একটি গবেষণা প্রতিবেদনে জানা যায়, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বেসরকারি ব্যাংকগুলো বেশি অর্থায়ন করছে। ২০১৮ সালে বেসরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি হয়েছে ৭৪ শতাংশ। প্রায় ১৯ শতাংশ অর্থায়ন হয়েছে বিদেশি ব্যাংকের মাধ্যমে। আর মাত্র ৭ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে।

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১১ সালে সরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি হয়েছিল ১৮ শতাংশ। সেসময় বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে রফতানি হয় ৭১ শতাংশ এবং ১১ শতাংশ অর্থায়ন হয়েছিল বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে।

বুধবার (২০ মার্চ) রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘ট্রেড সার্ভিসেস অপারেশনস অব ব্যাংকস’ শীর্ষক বার্ষিক পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আব্দুর রহিম। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের অধ্যাপক এবং পরিচালক (প্রশিক্ষণ) ড. শাহ মো. আহসান হাবীবের নেতৃত্বে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।

প্রধান অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএম নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ট্রেড সার্ভিসের ওপর নির্ভরশীল। প্রত্যেকটি দেশে ট্রেড সার্ভিসের ক্ষেত্রে আলাদা রেগুলেশন রয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০১৮ সালে নতুন গাইডলাইন করেছে।’

তিনি আরও জানান, বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং তত্ত্বাবধানকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে নতুন গাইডলাইন আরও কার্যকর করতে হবে। এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনলাইনভিত্তিক রিপোটিং ও নজরদারি ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ঠেকাতে এবং ডাটা সঠিকভাবে প্রদানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’

এসময় বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসছে। এজন্য দক্ষ কর্মী গড়ে তোলা প্রয়োজন।’

তিনি আরও বলেন, ‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই রফতানির প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। এর সঙ্গে ব্যাংকের অর্থায়ন জড়িত। সুতরাং ব্যাংক কর্মীদের প্রশিক্ষণের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করতে হবে।’

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যাতে পণ্য মূল্য বেশি দেখাতে না পারে, সেজন্য ব্যাংকারদের সর্তক থাকতে হবে। একটি ডাটা বেজ করতে পারলে কোনও ব্যবসায়ী এ ধরনের অনিয়ম করার সুযোগ পাবে না।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি বলেন, ‘ব্যাংকাররা সর্তক থাকলে আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যে কোনও অনিয়ম করার সুযোগ নেই।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এবং বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো: আব্দুর রহিম বলেন, ‘ব্যাংকারদের বড় ঋণ এবং বড় এলসি খোলার ক্ষেত্রে সর্তক থাকতে হবে। গ্রাহক সম্পর্কে পুরোপুরি না জেনে অর্থায়ন করা ঠিক নয়।’

কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) শুল্ক মূল্যায়ন এবং অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা অধিদফতরের কমিশনার ড.মঈনুল খান। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট অফিস থেকে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন অফিসটির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ তারিকুজ্জামানসহ শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। সিলেট অফিসের অডিটোরিয়ামে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ তারিকুজ্জামান।