আজ পবিত্র শবে মিরাজ

শবে মিরাজ

নিউজ নাইন২৪, ইসলামী ডেস্ক: আজ দিবাগত রাতটিই হচ্ছে পবিত্র শবে মিরাজ। এরাতে শেষ নবী হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি উদ্ধাগমন বা আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসমানে গমন করেন। রাত্রটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাৎপর্যপূর্ণ ও বেমেছাল ফাযায়িল-ফযীলতপূর্ণ, বরকতপূর্ণ রাত। এ রাতের ঘটনায় পরিপূর্ণভাবে বিশ্বাস করা প্রত্যেক মুসলমান উনাদের জন্য ফরয। অস্বীকার ও অবজ্ঞা করা বা সন্দেহ পোষণ করা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত।

পবিত্র এ রাতের বর্ণনা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তঅ মহান আল্লাহ পাক পবিত্র কুরআন শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন, “পূত-পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা উনি, যিনি স্বীয় বান্দা তথা সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে রাত্রির একাংশে পবিত্র মসজিদুল হারাম তথা পবিত্র বাইতুল্লাহ শরীফ থেকে পবিত্র মসজিদুল আক্বছা বা পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত ভ্রমণ করিয়েছেন যার চারপাশে আমি পর্যাপ্ত রহমত, বরকত, সাকীনা দান করেছি; যাতে আমি উনাকে আমার কুদরত মুবারক উনার নিদর্শন মুবারক (জাহিরীভাবে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে) দেখিয়ে দেই। বিশেষ করে আমার সাক্ষাৎ দিয়ে দেয়ার জন্য। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক তিনি পরম শ্রবণকারী ও সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা বনী ইসরাইল: আয়াত ১)

হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পবিত্র মি’রাজ শরীফ  সশরীর-এ হয়েছে। মহান আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি দুনিয়াবী হিসেবে ৫১তম বয়সে ২৬শে রজবুল হারাম রোববার দিবাগত রাত্রে অর্থাৎ সোমবার পবিত্র রাত্রে পবিত্র কা’বা শরীফ থেকে পবিত্র বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ, সেখান থেকে ছিদরাতুল মুনতাহা হয়ে পবিত্র আরশে মুয়াল্লায় মহান আল্লাহর সাথে মুবারক সাক্ষাৎ করে আবার যমীনে তাশরীফ আনেন। যা বিশিষ্ট ৪৫ জন হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম বর্ণনা করেছেন। সুবহানাল্লাহ!

মি’রাজ অর্থ হচ্ছে ঊর্ধ্বারোহণ। সম্মানিত ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মহান আল্লাহর রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিয়ইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে মহান আল্লাহর যে সাক্ষাৎ বা দীদার মুবারক হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে উহাই পবিত্র মি’রাজ শরীফ। সুবহানাল্লাহ!

আজ বুধবার দিবাগত রাতটিই সেই পবিত্র লাইলাতুল মি’রাজ শরীফের বরকতময় রাত।

এ রাতের আমল:

প্রত্যেক মুসলমান পুরুষ-মহিলা, ছেলে-মেয়ে সকলের জন্যই এ বরকতময় রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী, তওবা-ইস্তিগফার, পবিত্র মিলাদ-ক্বিয়াম ও বেশি বেশি দোয়া-মুনাজাত করা এবং পরের দিন অর্থাৎ বৃহস্পতিবার দিনে রোযা রাখা।

পবিত্র মিরাজ শরীফ সম্পর্কে বিশুদ্ধ আক্বীদাঃ

মিরাজ শরীফ-এর রহমত, বরকত, সাকিনা থেকে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে একশ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী বিভ্রান্ত পথভ্রষ্ট ওলামায়ে সু’ শ্রেণী প্রচার করতে থাকে যে, ‘মিরাজ শরীফ এর তারিখ নিয়ে মতপার্থক্য আছে, তাই পালন করা উচিত নয়।’ মূলত কোন বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলে যদি তা পালন নিষিদ্ধ হয় তাহলে উলামায়ে সূ’রা মহান আল্লাহ পাককে একজন মানে কেন? কারণ হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেব-দেবী, আবার খৃষ্টানদের ৩ জন সৃষ্টিকর্তা। সুতরাং মতপার্থক্য থাকলে মশহুর বা প্রসিদ্ধ মতটি গ্রহন করতে হবে। মশহুর বা প্রসিদ্ধ মতে মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে সোমবারে অর্থাৎ ২৬শে রজব দিবাগত রাতে।

যেমন, এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য মুহাদ্দিছ আরিফ বিল্লাহ আল্লামা হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী হানাফী রহমতুল্লাহির নিজ হাতে লিখা ‘মা ছাবাতা বিস সুন্নাহ কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় বলেন-

اعلم انه قد اشتهر فيما بين الناس بديار العرب ان معراجه صلى الله عليه وسلم كان لسبع وعشرين من رجب

জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশগুলোর লোকদের মধ্যে মশহূর বা প্রসিদ্ধ ছিলো যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতেই।

আবার এক শ্রেণীর উলামায়ে সূ’রা বলে থাকে, মিরাজ শরীফ-এর মক্কা শরীফ থেকে বাইতুল মুকাদ্দাস শরীফ পর্যন্ত ঘটনা বিশ্বাস করা ফরয এবং বাকী অংশ বিশ্বাস করা নফল। তাদের এই কুফরী মুলক বক্তব্যের জবাবে বলতে হয়ে, মিরাজ শরীফ-এ মহান আল্লাহ পাক তিনি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে উম্মতে মুহম্মদীর জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায হাদিয়া করেছেন যা মুসলমানদের জন্য আদায় করা ফরয করা হয়েছে। তাহলে নামায সংশ্লিষ্ট সেই ঘটনা বিশ্বাস করা কি করে নফল হতে পারে? মূলতঃ মিরাজ শরীফ-এর পুরো ঘটনা বিশ্বাস করাই ফরয। কারণ মিরাজ শরীফ আংশিক বিশ্বাস করা নামায অস্বীকারের নামান্তর, আর ইসলামের পাঁচ রুকনের একটি রুকন অস্বীকারকারী মুসলমান থাকতে পারেনা।

মিরাজ শরীফ এলেই উলামায়ে সূ’রা নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক প্রসঙ্গে কুফরী আক্বীদা প্রচার করতে থাকে। তারা বলে থাকে যে, মিরাজ শরীফ-এর রাতে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সিনা মুবারক চাক করে শয়তানের অংশ বের করা হয়েছিল। নাঊযুবিল্লাহ! ওই সমস্ত উলামায়ে সূ’দের কাছে প্রশ্ন- তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি কেন কুরআন শরীফ-এর সূরা ইনশিরাহর এক নং আয়াত শরীফ-এ ইরশাদ করেছেন, আমি কি আপনার বক্ষ মুবারককে প্রশস্ত (চাক) করেনি? যদি শয়তানের অংশই থাকতো নাঊযুবিল্লাহ! তাহলে আল্লাহ পাক তিনি বলতেন, আমি কি আপনার ক্বলব মুবারক-কে প্রশস্ত (চাক) করিনি? মূলত, সিনা মুবারক চাক উনার সীমাহীন মর্যাদারই বহিঃপ্রকাশ।

আবূ দাউদ, নাসায়ী, মুসনদে আব্দুর রাযযাক ইত্যাদি কিতাবের হাদীছ শরীফ দ্বারা প্রমাণিত যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার রক্ত, ইস্তিঞ্জা মুবারক পান করার কারণে পানকারী ব্যক্তি জান্নাতী বলে সুসংবাদপ্রাপ্ত হয়েছেন। এছাড়া বিশ্ববিখ্যাত ফতওয়ার কিতাব ‘দুররুল মুখতার-এ উল্লেখ আছে যে, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক-এর সবকিছুই পবিত্র থেকে পবিত্রতম এবং সে সমস্ত নিয়ামত মুবারক যার বা যাঁদের ভিতর প্রবেশ করেছে বা করবে উনার জন্য জাহান্নাম হারাম হয়ে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে। সুবহানাল্লাহ! তাহলে কি করে এ কথা বলা যেতে পারে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জিসিম মুবারক থেকে নাপাকী বের করা হয়েছে? নাউযুবিল্লাহ! একমাত্র কাট্টা কাফিরের পক্ষেই এ ধরনের কথা উচ্চারণ করা সম্ভব।

নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মিরাজ শরীফ শেষ করে ফিরে আসার পরও ওযুর পানি গড়িয়ে পড়ছিল, দরজার কড়া নড়ছিল এবং হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিছানা মুবারক গরম ছিল।

এক শ্রেণীর তথাকথিত শিক্ষিত ও নামধারী মাওলানারা বলে থাকে যে, যেহেতু মিরাজ শরীফ ২৭ বছর ব্যাপী সংঘটিত হয়েছিল তাই মিরাজ শরীফ সংঘটিত হওয়ার সময় পৃথিবীর সময়কে স্থির করে দেয়া হয়েছিল। এ বক্তব্যের মাধ্যমে তারা প্রমাণ করতে চায় যে, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি সময়ের মুখাপেক্ষী। নাঊযুবিল্লাহ!

হযরত উযাইর আলাইহিস সালাম তিনি ১০০ বছর যাবৎ নিদ্রারত ছিলেন। এই সময়কালের মধ্যে উনার বাহন গাধাটি মরে, পঁচে মাটির সাথে মিশে গেল। কিন্তু উনার খাদ্য মুবারক অক্ষত অবস্থায় রইল। মুবারক নিদ্রা ভঙ্গের পর তিনি যখন নিজ এলাকায় ফিরে আসলেন তখন দেখতে পেলেন উনার পুত্রের বয়স মুবারক ২০ থেকে ১২০ বছর। এক্ষেত্রে উলামায়ে ‘ছূ গং কি জবাব দেবে? সময় যদি স্থিরই করতে হয় তাহলে পুত্রের বয়স কিভাবে পিতার বয়সের চেয়ে বেশি হলো?

উল্লেখ্য যে, আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা হলো, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি শুধুমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনার মুখাপেক্ষী এবং বাকি সবকিছুই উনার মুখাপেক্ষী। আবার অনেকে মিরাজ শরীফ-এর ঘটনাকে যবন, ম্লেচ্ছ, আইনস্টাইনের E=mc2 নামক সূত্রের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করার অপচেষ্টা চালায়। এটা মহান আল্লাহ পাক উনার কুদরত মুবারক এবং নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মুজিযা শরীফকে ইহানত করার শামিল। তাই মুসলমানদের উচিত মিরাজ শরীফ সংক্রান্ত কুফরী আক্বীদাগুলো এবং মনগড়া ব্যাখ্যাগুলো পরিহার করে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা পোষণ করা। মহান আল্লাহ পাক তিনি আমাদেরকে তাওফীক দান করুন এবং উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইহসান করুন। আমীন।