আইনজীবীর জালিয়াতি-বিচারকের স্বেচ্ছাচারিতা-অসহায় বাদী

উচ্চ আদালতে বিচারপতি মানিকের রায় পুনঃশুনানী

আইন আদালত

ঢাকা : আইনজীবীর জালিয়াতির কারণে ছোট বোনের অপরাধে জেলের ঘানি টানছেন আসামির বড় বোন। এরপর ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে ঢাকার সিএমএম আদালতে প্রতিকারের জন্য গিয়েও ম্যাজিস্ট্রেটের স্বেচ্ছাচারিতায় কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেছেন অপর বোন আঁখি আক্তার।

বুধবার আঁখি আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজাদ রহমানের কাছ থেকে এ ঘটনার কথা জানা যায়।

ওই আইনজীবী জানান, গত বছর ১২ এপ্রিল লাকী আক্তার মুক্তা (২২) বিমানযোগে কুয়ালালামপুর থেকে দেশে এলে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১০টি স্বর্ণের বারসহ আটক হন। স্বর্ণপাচারের অভিযোগে ঢাকার সিএমএম আদালত ও ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে তার জামিন নামঞ্জুর হয়।

নিম্ন আদালতে জামিন নামঞ্জর হওয়ার পর মামলার কাগজপত্রে ১০টি স্বর্ণের বারের স্থলে ২৫ বোতল ফেনসিডিল দেখিয়ে জাল কাগজপত্র তৈরি করে হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করেন আইনজীবী ইকবাল হোসেন খান এবং তার সহযোগী ফারজানা বেগম ছবি। ওই বছর ৯ জুলাই হাইকোর্ট মুক্তার জামিন মঞ্জর করেন।

পরবর্তীতে কাগজপত্র জাল প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্টের আদেশে গত ৩০ আগস্ট মহানগর দায়রা জজ মো. কামরুল হোসেন মোল্লা আসামি লাকী আক্তার মুক্তার জামিন বাতিল করে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। কিন্তু আসামি নির্ধারিত সময়ে আত্মসমর্পণ না করে পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানা জারির পর পুলিশ আসামির ঠিকানায় অভিযান চালিয়ে গত ১৭ নভেম্বর লাকী আক্তার মুক্তা মনে করে তার আপন বড়বোন লাকীকে (২৬) গ্রেপ্তার করে আদালতে চালান করে। এরপর থেকে তিনি এখনো কারাগারে আটক আছেন।

বিচারপ্রার্থীকে না জানিয়ে স্বর্ণের মামলাকে ফেনসিডিল মামলায় পরিণত করায় হাজতবাসী লাকীর অপর বোন আঁখি আক্তার বাদী হয়ে গত বুধবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার সিএমএম আদালতে আইনজীবীর ইকবাল হোসেন খানের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন।

ওই মামলায় আসামি করা হয় আইনজীবী ইকবাল হোসেন খান এবং তার সহযোগী ফারজানা বেগম ছবিকে।

সকাল সাড়ে ১১টায় বিচারক বাদীর জবানবন্দী গ্রহণ করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানান। কিন্তু বিকেলে বাদী ও তার আইনজীবী ওই মামলার বিষয়ে বিচারকের আদেশ জানতে আদালতে গিয়ে দেখেন মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্র্রেট স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন।

খারিজ আদেশ থেকে জানা যায়, মামলায় ৪২০ ও ৫০৬ ধারার কোনো উপাদান না থাকায় মামলা নেননি বিচারক।

এ বিষয়ে বাদীর আইনজীবী জানান, যেহেতু মামলায় তারা ৪২০ ও ৫০৬ ধারা যুক্তই করেননি সুতরাং ওই ধারার কোনো উপাদান থাকবে কীভাবে?

এবিষয়ে মামলার বাদী বলেন, ‘মামলা না নেয়ায় আমার মনে হয়েছে, আসামি অ্যাডভোকেট ইকবাল হোসেন খানের সঙ্গে ম্যাজিস্ট্র্রেট স্নিগ্ধা রানী চক্রবর্তী সুসম্পর্ক আছে। আর জন্যই ম্যাজিস্ট্রেট আমার মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন। এখন আমি প্রচণ্ড অসহায় বোধ করছি।’