অ্যাসাইনমেন্ট জমার আগে বেতন পরিশোধের চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনার নামে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এরই মধ্যে বার্ষিক পরীক্ষার বদলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘অ্যাসাইনমেন্ট’ নিচ্ছে রাজশাহীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।

কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট জমার আগেই বকেয়া বেতন শোধের চাপ দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে খোদ রাজশাহী শিক্ষাবোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজও।

নগরীর অন্যান্য বেসরকারি ও প্রাইভেট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও একই দশা। এমন দুর্দিনেও স্বল্প সময়ের মধ্যে সন্তানের বেতনের টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন অভিভাবকরা।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, তাদের আগে বেতন পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে। তারপর অ্যাসাইনমেন্ট দিতে বলা হচ্ছে।

প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার সময় টাকা পরিশোধ না থাকলে দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার আগে অবশ্যই বেতন পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে। এজন্য মোবাইলে দেয়া হচ্ছে এসএমএস।

এরই মধ্যে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের বেতন পরিশোধের এসএমএস মোবাইলে পাঠিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করা হচ্ছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের প্রত্যেককে বেতন পরিশোধের জন্য বলা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীরা জানায়, মোবাইলে এসএমএস পেয়ে তাদের অভিভাবকরা কষ্ট করে হলেও টাকা জমা দিয়েছেন। যারা প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেয়ার দিন টাকা পরিশোধ করতে পারেনি তাদের দ্বিতীয় অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার আগেই টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে।

রাজশাহীর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। প্রতিষ্ঠানটির দ্বিতীয় থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৫৫৫ টাকা। অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বেতন ৬৫৫ টাকা। আর মানবিক বিভাগের একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাসিক বেতন ৫৫৫ এবং বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থীদের বেতন মাসে ৭৫৫ টাকা।

জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এই সময়ের মধ্যেই রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থীদের বেতন ছয় থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত বকেয়া পড়েছে।

ছুটির আগেও যাদের কয়েকমাস বকেয়া ছিল তাদের মোট বকেয়ার পরিমাণ ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। অ্যাসাইনমেন্ট দেয়ার আগে অভিভাবকদের একসঙ্গে এতগুলো টাকা পরিশোধ চাপ হয়ে যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করে একজন অভিভাবক বলেন, তিনি অল্প বেতনে চাকরি করেন। একসঙ্গে এতগুলো টাকা তিনি কীভাবে দেবেন? তাছাড়া এতোদিন তো স্কুল বন্ধ ছিল। বন্ধ সময়ের বেতন কেন দিতে হবে?

তিনি বলেন, সরকার লকডাউনের সংকটকালের সময়ের জন্য বিভিন্ন খাতে প্রণোদনা দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে তাদেরও লকডাউনের সময়ের বেতন মওকুফ করে দেয়ার দাবি জানান এই অভিভাবক।

বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য এসএমএস দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ তাইফুর রহমান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান সরকারি। কিন্তু শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন হয় শিক্ষার্থীদের বেতনের টাকায়। তাই আমাদের টাকা আদায় করতে হচ্ছে।

শিক্ষকরা আত্মীকরণ হয়ে গেলে তখন আর শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এত টাকা বেতন আদায়ের প্রয়োজন হবে না। দ্রুতই আত্মীকরণ হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

তিনি বলেন, টাকার জন্য এসএমএস দেয়া হয়েছে সেটা ঠিক। তবে আমরা অনুরোধ করেছি। টাকা না দিলে যে অ্যাসাইনমেন্ট গ্রহণ করা হবে না ব্যাপারটি এরকম নয়।

তাছাড়া অনেক অভিভাবকই এসে তাদের সমস্যার কথা জানাচ্ছেন। কেউ কেউ বলছেন লকডাউনে চাকরি হারিয়েছেন। এ রকম ২০০ আবেদন আমরা পেয়েছি। প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু বেতন মওকুফ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী মহানগরী এবং জেলার প্রতিটি স্কুলই এখন শিক্ষার্থীদের বকেয়া বেতন পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছে।

শিক্ষকরা বলছেন, তারাও অসহায়। বেতন আদায় না করলে তাদের নিজেদেরই বেতন হবে না। তারা শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের বোঝাচ্ছেন স্কুল বন্ধ থাকার কারণে তাদেরই কারও কারও তিন মাস বেতন হয়নি। তারাও বেকায়দায় আছেন।

জানতে চাইলে বিষয়টি স্বীকার করেছেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের রজাশাহী অঞ্চলের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. কামাল হোসেন।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের লকডাউনকালের বেতনের কী হবে তা ঠিক করতে আমরা সভা করেছি। প্রায় তিন ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। কিন্তু কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর কথা জানিয়েছে। সেটাও জানানো হয়নি। সুতরাং স্কুলে বেতন আদায় করতে কোনো বাধা নেই।

বেতন আদায় করা হচ্ছে। তবে মানবিক দিক বিবেচনা করে যতদূর সম্ভব ছাড় দেয়ার জন্য বলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।