অভ্যন্তরীণ নৌপথের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর তাগিদ

অভ্যন্তরীণ নৌপথের সম্ভাবনা কাজে লাগানোর তাগিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ নৌপথকে কাজে লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ মহল। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রধানত ছয় কারণে নদীপথের ব্যবহার বাড়ানো জরুরি। এগুলো হচ্ছে- নৌপথে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন খরচ কম, পবিবেশবান্ধব, জ্বালানি সাশ্রয়ী, কম ঝুঁকি, আঞ্চলিক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা সহজ হওয়া এবং সড়কপথে যানজটের চাপ কমানোর জন্য অভ্যন্তরীণ নৌপথগুলো দ্রুত ব্যবহার উপযোগী করে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে নদীপথ এবং নৌপরিবহন ব্যবস্থা উন্নয়নে বেসরকারি খাতকে কাজে লাগানো যেতে পারে। বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেয়ার কথাও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রতি বছর বাংলাদেশে ১৪ হাজার জাহাজের মাধ্যমে মাত্র ২০০ মিলিয়ন টনের কাছাকাছি পণ্য পরিবহন করা হয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ৬১৫ মিলিয়ন টনের বেশি পণ্য নদীপথে পরিবহন হয়। এছাড়া ইউরোপে ৫৬৫ মিলিয়ন টন পণ্য এবং চীনে ১ দশমিক ১ বিলিয়ন টন পণ্য পরিবহন হয় নদীপথে। উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে নদীপথের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

বলা হয়েছে, পণ্য ও মানুষ পরিবহনে বাংলাদেশে নদীপথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেশে বর্তমানে ২৪ হাজার কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ নৌপথ থাকলেও মাত্র ৬ হাজার কিলোমিটার পরিবহন কাজে ব্যবহার করা হয়। এর সঙ্গে শুষ্ক মৌসুম এবং রাতের বেলার নিরাপত্তার বিষয়টি যোগ হলে নৌপথের পরিমাণ আরও অনেক কমে যায়। নৌপথের পরিমাণ বাড়িয়ে যথোপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে বাংলাদেশে রফতানিমুখী অর্থনীতির আরও বিকাশ করা সম্ভব। এ পথ ব্যবহার করে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সক্ষমতা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। কেননা এখন মাত্র ৩ শতাংশ কন্টেইনার কার্গো নদীপথে পণ্য পরিবহন করে। ৮০ শতাংশ বাল্ক জাহাজ পরিবহন করে। রাস্তার তুলনায় নদীপথে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। ফলে জনস্বাস্থ্য রক্ষা পায়। জাহাজে পণ্য পরিবহন বাড়লে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে যানজট কমাতে সহায়ক হবে। সেই সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তাও নিশ্চিত হবে। তাছাড়া নদীপথ যাত্রী পরিবহনেও বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে গরিব মানুষের যাতায়াত সহজ করতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে পণ্য পরিবহনে সংযোগ স্থাপনে সহায়ক হতে পারে নৌপথ। চট্টগ্রামসহ দেশের বন্দরগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির কথাও বলা হয়েছে।

গবেষকরা জানিয়েছে, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়া সত্ত্বেও সরকার এই নদীমাতৃকার সুবিধা জনগনকে প্রদান করতে ব্যর্থ হচ্ছে। সারাদেশে শত শত নদ-নদী থাকার পরও সড়ক পথে প্রতিনিয়ত বাড়ছে পণ্য পরিবহনের চাপ, ফলে বাড়ছে যানজট। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে যাত্রী পরিবহনের ক্ষেত্রেও সড়কপথে চাপ থাকার কারনে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এক্ষেত্রে যদি নদীপথকে গুরুত্ব দেয়া হয় তাহলে এই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিও নদীকেন্দ্রীক ব্যাপক শক্তিশালী হবে।