অনুমোদন ছাড়াই ঋণ নিতে পারবে বিদেশী কোম্পানি

অনুমোদন ছাড়াই ঋণ নিতে পারবে বিদেশী কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশী মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে না। অপর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি ছাড়াই বিদেশী কোম্পানিগুলো তাদের মুনাফা নিতে পারবে। বিদেশী কোম্পানিগুলোর জন্য বড় ধরনের এ ছাড় দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রানীতিমালা শিথিল করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এর মাধ্যমে বিদেশী কোম্পানিগুলো অনৈতিকভাবে যেন বাড়তি বৈদেশিক মুদ্রা নিতে না পারে তার জন্য গৃহীত সব বন্ধ দরজা খুলে দেয়া হলো।

এ দিকে ব্যাংকের ঋণখেলাপি হওয়ার জন্য কিস্তি অপরিশোধিত থাকার মেয়াদ বিদ্যমান ৬ মাস থেকে বাড়িয়ে দেড় বছর করা হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোতে খেলাপিঋণ চিহ্নিত হওয়া ছাড়াই অলস তহবিলের অঙ্ক বাড়বে। একই সাথে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে ব্যাংকের মুনাফার ওপর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিদেশী মালিকানাধীন কোনো কোম্পানি স্থানীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হতো। এর কারণ হিসেবে, দেশে কার্যত বিদেশী কোম্পানিগুলো স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নিয়ে মুনাফা করে আবার বৈদেশিক মুদ্রায় মুনাফা বিদেশে নিয়ে যায়। অথচ অনুমোদন না দিলে বিদেশী মুদ্রায় মূলধন এনে থাকে কোম্পানিগুলো। এতে বৈদেশিক মুদ্রার প্রবাহ বেড়ে যায়। অপর দিকে স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নিলে ওই কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে গেলে ওই কোম্পানির বিপরীতে বৈদেশিক মুদ্রার দায় সৃষ্টি হয়। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ উভয় দিক থেকে দেশ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ কারণে কোনো বিদেশী মালিকানাধীন কোম্পানি স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নেয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হতো। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার আগে তা যাচাই-বাছাই করত। কোনো কোম্পানির সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না হলে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অনুমোদন দেয়া হতো না। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার নীতিমালার এ বিষয়টি গতকাল শিথিল করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই কোম্পানিগুলো তাদের ইচ্ছেমাফিক স্থানীয় মুদ্রায় ঋণ নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে শুধু তাদের প্রধান কোম্পানির লেনদেনকৃত ব্যাংকের গ্যারান্টি আনতে হবে। ওই গ্যারান্টিপত্র জামানত হিসেবে রেখে স্থানীয় যেকোনো ব্যাংক সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ঋণ দিতে পারবে।

অপর দিকে, আগে বিদেশী কোম্পানিগুলো তাদের অর্জিত মুনাফা দেশে পাঠানোর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের প্রয়োজন হতো। মুনাফা দেশে নেয়ার আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যাচাই-বাছাই করত। কেউ যেন ভুয়া মুনাফার ভিত্তিতে লভ্যাংশ নিজ দেশে নিতে না পারে সে জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি করত; কিন্তু একপর্যায়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ নীতিমালা শিথিল করে দেয়। তখন বলা হয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়াই মুনাফা দেশে নিতে পারবে। তবে তার প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংকে দাখিল করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো কোম্পানি ভুয়া মুনাফার ভিত্তিতে ডিভিডেন্ড দেশে নিয়ে গেলে তা যাচাই-বাছাই করা হতো। যাচাই বাছাইয়ে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে মুনাফা বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে হতো।

ঋণখেলাপি হতে মেয়াদ বাড়ল : লকডাউনের প্রভাব মোকাবেলায় কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিতরণ করা ঋণখেলাপি হিসেবে শ্রেণী বিন্যাস করতে এ ছাড় দেয়া হয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এ বিষয়ে এক সার্কুলার জারি করা হয়েছে। শুধু খেলাপি ঋণের মেয়াদেই ছাড় দেয়া হয়নি, প্রভিশনেও ছাড় দেয়া হয়েছে। আগে সব ধরনের ঋণে এক শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হতো। এখন তা কমিয়েছে দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, লকডাউনের প্রভাব মোকাবেলায় কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ব্যাংকগুলোকে ঋণ বিতরণে উৎসাহিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই নীতিমালা শিথিল করেছে।

জানা গেছে, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো ঋণ পরিশোধের ৬ মাস অতিক্রম হলেই তা নিম্নমান হিসেবে চিহ্নিত হতো। নতুন নিয়মে কিস্তি পরিশোধের ৬ মাস থেকে ১৮ মাসের কম (দেড় বছর পর্যন্ত নিম্নমান হিসেবে চিহ্নিত হবে। অর্থাৎ ১৮ মাস পর্যন্ত কেউ ঋণ পরিশোধ না করলে ওই ঋণ খেলাপি হবে না। আবার এ নিম্নমান ঋণের বিপরীতে আগে প্রভিশনের হার ছিল ২০ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এ দিকে কোনো চলমান ঋণ আগের কোনো ঋণ ৯ মাস থেকে ১২ মাসের কম সময় খেলাপি হিসেবে থাকলে তা সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত হতো। এখন ১৮ মাসের বেশি থেকে ৩০ মাসের কম সময় পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে থাকলে তা সন্দেহজনক হিসেবে চিহ্নিত হবে। সন্দেহজনক ঋণের বিপরীতে প্রভিশনের হার কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আগে সন্দেহজনক ঋণে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হতো ৫০ শতাংশ। এখন তা কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছে।

আবার আগে কোনো ঋণ ১২ মাস পরিশোধ না করলে তা মন্দ মানের অর্থাৎ কুঋণ হিসেবে ধরা হতো। এখন তা ৩০ মাসের বেশি সময় খেলাপি হিসেবে থাকলে তা মন্দ বা কুঋণ হিসেবে চিহ্নিত হবে। কুঋণের বিপরীতে আগে প্রভিশনের হার ছিল শতভাগ। নতুন নিয়মেও তা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।