অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় ভাটা

অধিকাংশ ব্যাংকের পরিচালন মুনাফায় ভাটা

নিজস্ব প্রতিবেদক: লকডাউনের কারণে খেলাপি ঋণ আদায় কার্যক্রম সম্ভব হয়নি। সুদের হার ডাবল ডিজিট থেকে সিঙ্গেলে পুনঃনির্ধারণ করা হয়। আবার লকডাউনের কারণে ঋণ বিনিয়োগ ও আমদানি-রপ্তানি কমে যায়। এছাড়া ঋণের দুই মাসের (এপ্রিল ও মে) সুদ ‘ব্লকড হিসাব’-এ রাখার বাধ্যবাধকতা এবং তারল্য সংকট’র কারণে ব্যাংকগুলোর আশানুরূপ ব্যবসা হয়নি। যার ফলে জানুয়ারি থেকে জুন (অর্ধবার্ষিকী) পর্যন্ত বেশিরভাগ ব্যাংকেরই পরিচালন মুনাফায় ভাটা পড়েছে।

৩০ জুন (বুধবার) ব্যাংক ক্লোজিংয়ের পর পাওয়া তথ্েয দেখা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংক অর্ধবার্ষিকীতে পরিচালন মুনাফা করেছে ২০২ কোটি টাকা। আগের বছরের একই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ২৬৪ কোটি টাকা। যমুনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা আগের বছরের একই সময়ে ৩১০ কোটি থেকে কমে এবার হয়েছে ২৮০ কোটি টাকা। মেঘনা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে মাত্র ১২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪৫ কোটি টাকা। এছাড়া এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের মুনাফা দাঁড়িয়েছে ৯০ কোটি টাকা, গতবার ছিল ৮৯ কোটি টাকা। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ১৭৫ কোটি টাকা, গতবার ছিল ২৭৮ কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ২৯০ কোটি টাকা, আগে ছিল ৩৬২ কোটি। তবে মধুমতি ব্যাংকের মুনাফা বেড়ে হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৯৮ কোটি। এক্সিম ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৩১৭ কোটি, গতবার ছিল ৩৩০ কোটি টাকা। সাউথ বাংলা ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা গতবারের চেয়ে কমেছে। এবার মুনাফার পরিমাণ ৭০ কোটি, গতবার ছিল ৯০ কোটি। পূবালী ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৪০৫ কোটি টাকা, গতবার যা ছিল ৫৪০ কোটি টাকা। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৪৩ কোটি টাকা, যা গতবার ছিল ৩৩১ কোটি টাকা। সাউথইস্ট ব্যাংক পরিচালন মুনাফা করেছে ৩৪২ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৫০৬ কোটি টাকা। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের মুনাফা হয়েছে ৩০৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে যা ছিল ৪০০ কোটি টাকা। শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ২৪৭ কোটি টাকা। গত বছরের এই সময়ে যা ছিল ৩২৫ কোটি টাকা।

অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে অর্ধবার্ষিকী হিসাবে (জানুয়ারি-জুন) পরিচালন মুনাফা গতবছরের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। এই দৌড়ে এগিয়ে অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক। এবার এদের পরিচালন মুনাফা হয়েছে যথাক্রমে ৫১২ কোটি ও ১৩০ কোটি টাকা। আগের বছর অগ্রণীর মুনাফা ছিল ৪৩১ কোটি টাকা এবং রূপালীর ৭৫ কোটি টাকা।

অবশ্য ব্যাংকগুলোর এই অর্ধবার্ষিকী পরিচালন মুনাফার হিসাব এখনও অনিরীক্ষিত এবং তা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রকাশও করেনি। এটি প্রকাশের এখতিয়ার রাখে শুধু সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)।

ব্যাংকগুলোর প্রত্যাশিত মুনাফা না হওয়া প্রসঙ্গে বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংক পর্ষদ চেয়ারম্যান ও অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্ধবার্ষিকী এই হিসাবটি প্রাথমিক স্তরের এবং তা অনিরীক্ষিত। এতে পরিচালন মুনাফা কম হয়ে থাকলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। এরকমই হওয়ার কথা ছিল। তিনি মনে করেন, মুনাফা কমার পেছনে লকডাউন একটি অন্যতম উপসর্গ মাত্র। এর অন্যান্য কারণগুলোও ব্যাংকের ব্যবসায় ভাটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে বলে দাবি তার।

নাম প্রকাশ না শর্তে অপর একটি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, পরিচালন মুনাফার হিসাব কাগজে কলমে যা দেখানো হয়েছে -ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা আরও খারাপ। তাই কোন ব্যাংকের মুনাফা কেমন সেটি জানতে হলে প্রভিশনে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।