‘১ এপ্রিল মুসলমানদের সাথে প্রতারণার দিবস’
নিউজ নাইন২৪ডটকম, ঢাকা: বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি মাওলানা আবদুল হালিম ও মহাসচিব মাওলানা মোঃ আবদুল লতিফ নেজামী ১ এপ্রিলকে বিশ্বের মুসমানদের সাথে প্রতারণার এক মর্মান্তিক দিবস হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল স্পেনে ৭ লাখ মুসলিম শিশু ও নরনারীকে হত্যার মধ্যদিয়ে এই দিবসের সূচনা হয়। মুসলিমদের সঙ্গে প্রতারণার স্মৃতি হিসেবে ইহুদী-খ্রিস্টানারা আনন্দ দিবস হিসেবে ”এপ্রিল ফুল” পালিত হয়ে আসছে।
নেজামে ইসলাম নেতৃবৃন্দ গ্রানাডা ট্রাজেডিকে বিজাতীয়দের সঙ্গে বন্ধুত্বের করুণ পরিণতির ইতিহাস তুলে ধরেন।
প্রায় ৫২৩ বছর পূর্বের কথা। স্পেনের অত্যাচারী রাজা রডরিকের দুঃশাসনে অতিষ্ঠ হয়ে মুসলমান বীর তারিক বিন জিয়াদ রহমাতুল্লাহি আলাইহি মাত্র ৭০০ সৈন্য নিয়ে রডরিকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে রডরিকের লক্ষাধিক সৈন্যকে পরাজিত করে মুসলিম সভ্যতার গোড়া পত্তন করেন। এই বিজয়ের মধ্য দিয়ে পরবর্তী ৮শ’ বছর মুসলমানরা আধিপত্য বিস্তার করে। মুসলমানদের নিরলস প্রচেষ্টায় এই ৮শ’ বছরে স্পেনে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও সভ্যতার ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি লাভ করে। তার সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে আছে গ্রানাডা, আলহামরা, টলোডো প্রভৃতি। কিন্তু এই ৮শ’ বছরের শেষের দিকে যখন মুসলমানরা ভুলে গেল তাদের অতীত ইতিহাস-ঐতিহ্য, মত্ত হয়ে গেল ভোগবিলাসে, জড়িয়ে পড়লো লোভ-লালসায়, সরে গেল কোরআন-সুন্নাহর আদর্শ থেকে তখন তারা আটকে যায় খ্রিস্টানদের কূটনৈতিক চক্রান্তে। খ্রিস্টানদের চোখে ধরা পড়ে মুসলমানদের অনৈক্য ও দুর্বলতা। ফলে মুসলিমবিদ্বেষী নরপিশাচ রাজা ফার্দিনান্দ ভাবলো ইউরোপীয় অঞ্চল থেকে গিরজীয় পর্বতমালা অতিক্রমকারী সম্প্রদায়কে যদি উচ্ছেদ করা না যায় তাহলে রাজত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। বরং গীর্জা থেকে তাদের আজানের ধ্বণী শুনা যাবে। এটা ফার্দিনান্দের জন্য মেনে নেয়া ছিল বড়ই কষ্টকর। তাই ফার্দিনান্দ মুসলিম নিধনের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে এবং একাজে উৎসাহী পার্শ্ববর্তী পর্তুগীজ রাণী ইসাবেলাকে বিয়ে করে উভয় মিলে একটি যৌথবাহিনী গঠন করে গ্রানাডা দখলের জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে। তারা যখন তাদের প্রস্তুতি সম্পন্নে ব্যস্ত তখন কতিপয় নামধারী স্বার্থাম্বেষী মুসলমান তাদের আশ্রয় দিলে তারা হঠাৎ মুসলমানদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।
হাজার হাজার নারী-পুরুষকে হত্যা করে। অবরোধ করে রাজধানী গ্রানাডা। তখন মুসলমানদের টনক নড়ে। তারা রুখে দাঁড়ায়। ফার্দিনান্দ বুঝতে পারে সম্মুখ যুদ্ধে মুসলমানদের সাথে আর পারা যাবে না, তাই সে অন্য পথ অবলম্বন করে। তারা ফসলের ক্ষেত, খাদ্যগুদাম, শহরের খাদ্য সরবরাহের প্রধান কেন্দ্র এবং ভেলা উপত্যকা ইত্যাদি জ্বালিয়ে দেয়। ফলে অচিরেই স্পেনে নেমে আসে দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষের কালো থাবায় যখন মুসলমানরা দিশেহারা তখন যৌথবাহিনী মুসলমানদের অবরোধ করে। এই সুযোগে প্রতারক ফার্দিনান্দ তার যৌথবাহিনীকে গ্রানাডার বিভিন্ন মসজিদের পার্শ্বে সশস্ত্র অবস্থান নেয়ার নির্দেশ দেয়। প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ফর্দিনান্দ ঘোষণা করে মুসলমানরা যদি অস্ত্র সমর্পণপূর্বক মসজিদে আশ্রয় নেয় তাহলে তাদের সম্পূর্ণ মুক্তি দেয়া হবে। আর যেসব মুসলমান সমুদ্রে খ্রিস্টান জাহাজে আশ্রয় নেবে তাদের অন্য মুসলিম রাষ্ট্রে পৌঁছে দেয়া হবে। ফার্দিনান্দের এ ঘোষণায় বিশ্বাস করে ১৪৯২ সালের ১ এপ্রিল মুসলমানরা সেইভাবে আশ্রয় নিলে প্রতারক ফার্দিনান্দের সম্মিলিত বাহিনী সকল মসজিদে তালা লাগিয়ে আবদ্ধ করে মসজিদে আশ্রয়রত মজলুম মুসলমানদের আগুনে পুড়িয়ে এবং জাহাজে আশ্রয়রত মুসলমানদের সমুদ্রে ডুবিয়ে মারে। সব মিলিয়ে সেদিন শাহাদৎ বরণ করে প্রায় ৭ লাখ মুসলমান। সেই অসহায় শান্তিপ্রিয় প্রতারিত মুসলমানদের আত্মচিৎকারে আকাশ-বাতাস যখন ভারি হয়ে উঠে তখন নরপিশাচ ফার্দিনান্দ স্ত্রী ইসাবেলাকে আনন্দে বলতে থাকে, ‘হায় মুসলমান! তোমরা এতো বোকা!’ আর ইসাবেলা উচ্চারণ করে, ‘হায় এপ্রিলের বোকা! শত্রুর আশ্বাসে কেউ বিশ্বাস করে!” সেই দিনই ইসাবেলা মুসলমানদের নাম দেয় ‘এপ্রিল ফুল’ অর্থাৎ এপ্রিলের বোকা।
ইতিহাসের অন্যতম নরপিশাচ ফার্দিনান্দ সেদিন মুসলমানদের সাথে যে ধোঁকাবাজি করেছিল, সৃষ্টি করেছিল মর্মান্তিক ইতিহাস, উন্মত্ত করেছিল মানবতার কবর রচনায়, সে দিনটি স্মরণ করার জন্য ধোঁকাবাজ খ্রিস্টানরা আজও প্রতি বছর ১ এপ্রিল পালন করে ‘এপ্রিল ফুল’। দুঃখজনক হলেও সত্য আজ আমাদের মাঝেও প্রবেশ করেছে খ্রিস্টানদের সংস্কৃতি, লেগেছে তথাকথিত আধুনিকতার কালো ছোঁয়া, আমরা ভুলে যাচ্ছি নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্য। যুগের স্রোতে গা ভাসিয়ে মুসলমানদের মধ্যেও আমার বন্ধুর মতো অনেকে পালন করে ‘এপ্রিল ফুল’ দিবস। এটাই নাকি আধুনিকতা! আমরা এতই বিবেকহীন! নিজেদের সাথে নিজেরাই প্রতারণা করছি!
১৯৯৩ সালের ১ এপ্রিল গ্রানাডা ট্রাজেডির ৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক সভায় মিলিত হয়ে বিশ্ব খ্রিস্টান সম্প্রদায় বিশ্বের মুসলিম জাগরণকে প্রতিহত করার জন্য গড়ে তোলে ‘হলি মেরি ফান্ড’। তারা সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বে খ্রিস্টানরাই আধিপত্য বিস্তার করবে। তাদের সেই সিদ্ধান্ত তারা আজ বাস্তবায়নের পথে এগুচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় একটির পর একটি মুসলিম রাষ্ট্রকে ধ্বংস করছে।