সরকার পতনের পর গণভবন হামলা-লুট, মন্ত্রী-এমপিদের বাড়ি স্থাপনায় হামলা-আগুন

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন, তাঁর কার্যালয়, জাতীয় সংসদ ভবনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত এসব ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, প্রধান বিচারপতির বাসভবন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবন, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বাসভবন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য-ম্যুরাল, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় রয়েছে। বেশির ভাগ ভবন থেকে আসবাব ও মূল্যবান জিনিসপত্র লুট হয়েছে।

বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বাসায় ভাঙচুর করা হয়। হামলাকারীরা ফটক ভেঙে বাসায় ঢুকে পড়ে। ভেতরে ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মন্ত্রীপাড়া হিসেবে পরিচিত মিন্টো রোডে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর সরকারি বাসায় হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। সেখান থেকে লুট করা হয় আসবাবসহ মূল্যবান বিভিন্ন জিনিসপত্র। মিন্টো রোডে বিচারপতিদের বাসভবন ও অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনের সরকারি বাসাতেও হামলা হয়।

 

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিকেল ৩টার দিকে হামলা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুকে প্রতিটি তলায় ভাঙচুর চালায়। পরে সেখানে আগুন দেওয়া হয়। এর আগেই নেতাকর্মীরা সেখান থেকে বেরিয়ে যান। দুপুর আড়াইটার দিকে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়েও হামলা হয়। সেখানে তখন দলটির নেতাকর্মী বা নিরাপত্তাকর্মী কেউ ছিলেন না। হামলাকারীরা ভাঙচুরের পাশাপাশি দুটি ভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়।

এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের প্রায় প্রতিটি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আগুন দেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবাজারের কাছে ফিনিক্স রোডে পুলিশ সদরদপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রাত পৌনে ৮টার দিকে একসঙ্গে অনেক মানুষ হামলা চালায়। তারা ব্যাপক ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়। সেখানে তাদের বাধা দেওয়ার মতো কেউ ছিলেন না। মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়েও হামলা চালানো হয়েছে।

এমপি শিমুলের বাড়িতে আগুন

এদিন ঢাকার বেশ কয়েকটি থানাতেও হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে রয়েছে যাত্রাবাড়ী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, মোহাম্মদপুর, উত্তরা পূর্ব, বাড্ডা, রামপুরা ও খিলগাঁও। কয়েকটি থানায় ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে অনেক হতাহত হয়।

ঢাকার বংশাল থানায় হামলায় গতকাল পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। তাদের লাশ রাতে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গে পাঠানো হয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন– বংশাল পুকুরপাড়ের আলী রাজ (৩৫) ও সোহাগ (২২)। বাকি তিনজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।

দুপুর পৌনে ২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালালে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি চালায়। এতে ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারীরা আবার জমায়েত হয়ে থানায় অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালায়। বিকেলে থানা ও আশপাশে আগুন লাগিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। কিছু থানায় হামলা হওয়ার আগেই বেরিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। আক্রমণের আশঙ্কায় রাজধানীর ৫০ থানার মধ্যে কদমতলী ও লালবাগসহ বেশির ভাগ ফাঁকা হয়ে যায়। এর আগে কদমতলী থানা আগের রাতেই পরিত্যক্ত ঘোষণা করে পুলিশ।

নড়াইলে মাশরাফি বিন মুর্তজার বাড়িতে আগুন

সন্ধ্যা ৬টার দিকে রমনায় ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারের বাসভবনে হামলা চালানো হয়। পরে হামলাকারীদের অনেককে সেখান থেকে আসবাব নিয়ে বের হতে দেখা যায়।