বিশ্বে মুসলমানরা নয় শ্বেতাঙ্গরাই বড় সন্ত্রাসী
![](https://i0.wp.com/newsnine24.com/wp-content/uploads/2019/03/adl-2.jpg?fit=462%2C216)
নিউজ ডেস্ক:মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর বিশ্বের দেশে দেশে অধিকাংশ জঙ্গি হামলার সঙ্গে মুসলমানরা জড়িত বলে অভিযোগ করে। সিএনএন, বিবিসি, স্কাইনিউজসহ বিশ্বের ইহুদি মালিকানাধীন প্রভাবশালী মিডিয়াগুলো মুসলমানদের ওপর ‘জঙ্গি তকমা’ দিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে। তাদের টার্গেট যেন ইসলাম ধর্ম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা সন্ত্রাস বন্ধের নামে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বিরুদ্ধে বিয়োদ্গার করছে; একাধিক মুসলিম রাষ্ট্রে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। সে কারনেই ইরাক, আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর আক্রমণ করে কল্পিত সন্ত্রাস বন্ধের চেষ্টা করে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। মুসলমানরা নয়, বরং সাদা বর্ণের খ্রিস্টান ইহুদিরাই বিশ্বে বেশি সন্ত্রাস করছে। তারাই মানুষ হত্যা করে বর্বরোতার প্রমাণ দিচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সংস্থার জরিপে সেই চিত্রই উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা যায় গত ১০ বছরে আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে যে হামলা হয়েছে তার শতকরা ৭১ ভাগ হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীরা (সাদা চামড়া)। এরা খ্রিস্টান, ইহুদি এবং অনন্য ধর্মাবলম্বী। আর ওই হামলাগুলোর ২৬ শতাংশের সঙ্গে মুসলমানরা জড়িত বলে বলা হচ্ছে।
‘অ্যান্টি-ডিফেম্যাশন লিগ’ নিউইয়র্কভিত্তিক এই সংস্থা কাজ করে ইহুদিবিরোধী ও বিভিন্ন জাতিগত বিদ্বেষমূলক ঘটনা নিয়ে। সংস্থাটির গবেষণায় এই ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে ২০০৮ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত যতোগুলো সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে সেগুলো মধ্যে ৭১ শতাংশ চালিয়েছে শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্যবাদীরা। সেই দেশে মুসলিম চরমপন্থীদের হামলা হয়েছে ২৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৭ সালের তুলনায় গতবছর যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
এদিকে দ্য ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস অব অস্ট্রেলিয়া নামের স্বনামধন্য গবেষণা সংস্থাটি জানিয়েছে যে ‘এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা দিনকে দিন বেড়েই চলছে।’ সিডনিভিত্তিক সংস্থাটির ‘বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- ‘২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে (সারাবিশ্বে) উগ্র-ডানপন্থী দল ও ব্যক্তিরা ১১৩টি সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে। এতে মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়- শুধুমাত্র ২০১৭ সালেই হামলা হয়েছে ৫৯টি। আর সেবছর মারা গিয়েছেন ১৭ জন। ২০১৭ সালে ১২টি হামলা হয়েছে যুক্তরাজ্যে, ৬টি, সুইডেনে, গ্রিস ও ফ্রান্সে দুটি করে হামলা চালানো হয়েছে। একই বছরে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা হয়েছে ৩০টি। তাতে নিহত হয়েছেন ১৬ জন। সংস্থাটির হিসাব মতে নারকীয় এই সব হামলার অধিকাংশই পরিচালিত হয়েছে ‘মুসলিমবিরোধী ভাবাবেগে আক্রান্ত উগ্র-ডানপন্থী শ্বেতাঙ্গদের দ্বারা’।
গ্লোবাল টেরোরিজম ডাটাবেজ এর দেয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে সেগুলো তিনভাগের দুইভাগ চালিয়েছে বর্ণবাদী, মুসলমানবিরোধী, ইহুদিবিরোধী, ফ্যাসিস্ট, সরকারবিরোধী এবং জাতিবিরোধী ভাবাবেগে প্রভাবিত ব্যক্তিরা।
‘বৈশ্বিক সন্ত্রাস সূচক ২০১৮’ প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, চলতি শতাব্দীর শুরুতে উত্তর আমেরিকায় অনেক সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জেহাদি দলগুলোর জড়িত থাকার খবর আসে। কিন্তু, গত দুই বছরে উগ্র-ডানপন্থী রাজনীতির বাড়বাড়ন্ত চোখে পড়ার মতো। এতে আরও বলা হয়, ‘২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় ৯টি সন্ত্রাসী হামলায় ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এইসব হামলার জন্য দায়ী শ্বেতাঙ্গ আধিপত্যবাদীরা।
প্রতিবেদনটির ভাষ্যমতে, ইসলামপন্থী সন্ত্রাসীদের কথা বেশি শোনা গেলেও (মূলত পশ্চিমারা ইসলামবিদ্বেষ থেকে অপপ্রচার করে) বাস্তবতা হচ্ছে, গত ১০ বছরে উগ্র-ডানপন্থীরাই বেশি হামলা চালিয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পসহ বিভিন্ন দেশের শীর্ষ নেতারা সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন বলেই উগ্র-ডানপন্থীরা হামলা করতে উৎসাহ পান। ধর্মীয় সন্ত্রাসের ঘটনাগুলো যেভাবে প্রচারিত হয় উগ্র ডানপন্থীদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সেভাবে প্রচারিত হয় না। এখন সেদিকটিতে নজর দেয়া সময় এসেছে। কেননা, সব জায়গাতেই উগ্র-ডানপন্থীদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপ প্রতিনিয়ত বেড়েই চলছে।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরের দুটি মসজিদে জুমার নামাজ পড়ার সময় শ্বেতাঙ্গ সন্ত্রাসীদের হামলায় ৪ জন বাংলাদেশীসহ অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিউজিল্যান্ড সফররত বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের শুক্রবার ওই সমজিদে জুম্মার নামাজ পড়ার জন্য যাওয়ার কথা ছিল।