বিদেশি ঋণগ্রহণ ও ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ অর্থমন্ত্রীর
স্বল্পোন্নত (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের পর দেশের সামনে সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ দুটোই দেখছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে তার দৃষ্টিতে সম্ভাবনাই বেশি। সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি মানসিকতারও উন্নয়ন ঘটাতে হবে বলে মনে করেন তিনি। একই সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিদেশি ঋণ গ্রহণ ও ব্যবহারে সতর্ক হওয়ার পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী।
বুধবার সচিবালয়ে ‘স্বল্পোন্নত দেশ হতে বাংলাদেশের উত্তরণ’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। অর্থ প্রতিমন্ত্রী এমএ মান্নানসহ শীর্ষ কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের উন্নয়ন নীতিবিষয়ক কমিটি-সিডিপি ১৭ মার্চ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে ওঠার যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি দেয়।
একটি দেশের মাথাপিছু আয় কমপক্ষে ১২৩০ ডলার, মানব উন্নয়ন সূচকে স্কোর ৬৬ বা তার বেশি এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে স্কোর ৩২ বা তার কম হলে সেই দেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতির যোগ্য বিবেচনা করা হয়। এই তিন সূচকেই বাংলাদেশ নির্ধারিত মান অর্জন করেছে।
জাতিসংঘের বিবেচনায় বর্তমানে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ১২৭৪ ডলার, মানব উন্নয়ন সূচকের স্কোর ৭৩ দশমিক ২ এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচকে স্কোর ২৫ দশমিক ২। সূচক তিনটির যে কোনো দুটিতে আগামী ছয় বছর জাতিসংঘের নির্ধারিত মানে থাকলেই ২০২৪ সালে বাংলাদেশ চূড়ান্তভাবে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে। উন্নয়নশীল দেশ হলে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো থেকে যে ঋণ পাওয়া যায় তার সুদ হার বাড়বে। রফতানি বাজারে এলডিসি হিসেবে যেসব সুবিধা রয়েছে তাও হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ২০২৪ সালের পর আরও তিন বছর অর্থাৎ ২০২৭ সাল পর্যন্ত এলডিসির সুবিধা পাবে। ওই স্বীকৃতি আসার পর এটি সরকারের পক্ষ থেকে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া।
সংবাদ সম্মেলনে বেশ উদ্দীপ্ত, হাসি ও খুশি ছিলেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এক সময় গরিব হিসেবে সারা দুনিয়ায় বাংলাদেশের বদনাম ছিল। বাংলাদেশ সাহায্যের জন্য হাত পাতে- সে কথা শুনতে হয়েছে। সে অবস্থা এখন আর নেই। আকাশ আর পাতাল পার্থক্য। আজকের এ অর্জন খুব গৌরবের।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ অনেক নিচে ছিল। এখন ওপরে উঠছে, আরও ওপরে উঠবে। দেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ কেবল যোগ্য হয়েছে, এখনও অনেক পথ বাকি। ২০২৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ এলডিসি থাকবে। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত একটা ট্রানজিশন পিরিয়ড। এখন মানসিকতাও পরিবর্তন করতে হবে। বেশি হারে আন্তর্জাতিক ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। কারণ এখন ঋণের সুদ হার বাড়বে। যদিও বাংলাদেশ স্বেচ্ছায় বিশ্বব্যাংকের স্কেলআপ ফ্যাসিলিটি নিয়েছে। এডিবি, জাপানের ঋণেও সুদ হার বাড়বে।
তিনি বলেন, চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি সম্ভাবনাও রয়েছে। উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি মূলত এক ধরনের ভাবমূর্তির উন্নয়ন। মানসিক শক্তির উল্লম্ম্ফন। তিনি বলেন, মানসিকতার পরিবর্তনে ইতিমধ্যে সরকার পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসডিজিবিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হলে কয়েকটি খাতে সুযোগ কমতে পারে। তবে অনেক নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। বিশেষ করে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার, জিএসপি প্লাসসহ নতুন নতুন অনেক ক্ষেত্রে দরজা খুলে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের কারণেই এ অর্জন সম্ভব হয়েছে।
ইআরডি সচিব শফিকুল আজম বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার কারণে বিদেশি ঋণের সুদহার বাড়বে তা নয়, দেশের জাতীয় আয় বাড়ার কারণেও তা বাড়বে। বরং উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার সুযোগ আছে।