বাংলাদেশে নারীর বর্তমান অবস্থা

তানজিনা সুলতানা
বাংলাদেশ, যে দেশ একদিন রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছিল, আজ সেই দেশ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে। আধুনিকতার ছোঁয়া যেমন নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছে, তেমনি কিছু ক্ষেত্রে তা আমাদের চিরায়ত মূল্যবোধ ও সংস্কৃতির সঙ্গে সংঘর্ষ তৈরি করছে। বিশেষ করে নারীদের অবস্থান ও ভূমিকাকে ঘিরে সমাজে নানা বিতর্ক দেখা যাচ্ছে।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলিম, যারা বিশ্বাস করে ধর্মীয় অনুশাসন ও পারিবারিক বন্ধনেই প্রকৃত সৌন্দর্য ও শৃঙ্খলা নিহিত। ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়েছে, তাদের সম্মানিত করেছে মা, বোন, স্ত্রী ও কন্যা হিসেবে। কিন্তু বর্তমান সময়ে নারীদের জীবনযাত্রা, পোশাক ও আচরণে পরিবর্তন এসেছে, যা অনেক ক্ষেত্রে সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
এতে ভারতীয় ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব সুস্পষ্ট। ভারত থেকে আসা সিনেমা, নাটক ও ফ্যাশনের ঢেউ আমাদের সমাজের নারীদের চিন্তা-চেতনায় গভীরভাবে প্রবেশ করেছে। এর ফলে অনেক নারী শালীনতা, পারিবারিক বন্ধন ও ধর্মীয় অনুশাসনকে উপেক্ষা করে ব্যক্তিস্বাধীনতার নামে ভিন্ন এক সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকছে। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের নারীদের একাংশ ‘পোশাকের স্বাধীনতা’ নিয়ে রাস্তায় নেমেছিল, যা স্পষ্টতই পাশ্চাত্য ও ভারতীয় অপসংস্কৃতির ছাপ। ইসলামে নারীদের সম্মান ও মর্যাদাকে পোশাকের মাধ্যমেই সংরক্ষিত রাখা হয়েছে, সেখানে এমন দাবির যৌক্তিকতা কতটা গ্রহণযোগ্য, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
সোশ্যাল মিডিয়ার বাড়াবাড়ি রকমের ব্যবহার নারীদের জীবনে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। ব্যক্তিগত জীবনের গোপনীয়তা বিলীন হচ্ছে, পারিবারিক বন্ধন দুর্বল হচ্ছে। অনেক নারী নিজেদের সামাজিক মাধ্যমে প্রদর্শনকে জীবনের মূল লক্ষ্য করে তুলছে, যা শুধু তাদের ব্যক্তিগত সম্মানের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্যও হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এর পাশাপাশি দেখা যাচ্ছে, অনেক নারী সংসার ও সন্তান লালন-পালনের দায়িত্বকে অবহেলা করছে। যার ফলে পরবর্তী প্রজন্ম সঠিক দিকনির্দেশনা না পেয়ে নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকাসক্তি, নৈতিক অবক্ষয়, পরিবারে অস্থিরতা—এসবের মূলে কোথাও না কোথাও দায়িত্বের প্রতি উদাসীনতা কাজ করছে।
বাংলাদেশের নারীদের উচিত নিজেদের অবস্থান ও মর্যাদাকে ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধের আলোকে পুনর্মূল্যায়ন করা। ভারতীয় বা পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির অন্ধ অনুসরণ না করে, তারা যদি ইসলামের নির্দেশনা ও নিজস্ব সংস্কৃতির শালীনতা বজায় রাখে, তবেই তারা প্রকৃত সম্মান ও নিরাপত্তা ফিরে পাবে। নারীর সৌন্দর্য কেবল বাহ্যিক নয়, বরং তার চরিত্র, শালীনতা ও দায়িত্ববোধের মধ্যেই তা প্রতিফলিত হয়।
বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থা টিকে থাকবে তখনই, যখন নারী-পুরুষ উভয়েই তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবে। নারীরা যদি পারিবারিক ও সামাজিক কাঠামো মজবুত রাখার জন্য সচেতন হয়, তবে একটি সুস্থ, সুন্দর ও সুসংগঠিত সমাজ গড়ে উঠবে, যেখানে নারীর প্রকৃত মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে।
শিক্ষার্থী, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়, কায়রো,মিশর