পানামা পেপার্স ক্যালেঙ্কারিতে সৌদি বাদশাসহ লুটেরা বিশ্বনেতাদের গোমর ফাঁস
নিউজ নাইন২৪ডটকম, ডেস্ক: পানামার একটি ল’ ফার্মের এক কোটি দশ লাখ গোপন নথি ফাঁস হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। সৌদি বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজসহ বিশ্বের ধনী আর ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা কোন কৌশলে কর ফাঁকি দিয়ে গোপন সম্পদের পাহাড় গড়েছেন বেরিয়ে আসছে সেই তথ্য।
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের যেসব প্রতিষ্ঠান গোপনীয়তা রক্ষার জন্য বিখ্যাত, পানামার এই মোস্যাক ফনসেকা তাদের অন্যতম।
গত ৪০ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি তাদের ক্ষমতাশালী মক্কেলদের কিভাবে অর্থ পাচারে সহযোগিতা করেছে, নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর এবং কর ফাঁকি দেওয়ার পথ দেখিয়েছে, সেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে এসব নথিতে।
এই মক্কেলদের মধ্যে ৭২ জনের নাম এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যারা কোনো না কোনো দেশের সাবেক বা বর্তমান সরকারপ্রধান। নিজেদের দেশে লুটপাট চালিয়ে টাকার কুমির হয়েছেন এমন কিছু স্বৈরশাসকের নামও তালিকায় রয়েছে।
বর্তমান সৌদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ ছাড়াও মোস্যাক ফনসেকার সেই মক্কেলদের মধ্যে রয়েছেন মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক, লিবিয়ার সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান মুয়াম্মার গাদ্দাফী, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ, আরব আমিরাতের প্রেসিডেন্ট খলিফা বিন জায়েদ আল সুলতান আল নাহিয়ান, কাতারের সাবেক আমির শেখ হামাদ বিন খলিফা, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ, ইরাকের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আয়াদ আলাউয়ি প্রমুখ।
এসব নথিতে বিলিয়ন ডলার পাচারের একটি চক্রের সন্ধান মিলেছে, যা পরিচালিত হয় একটি রুশ ব্যাংকের মাধ্যমে এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কয়েকজন ঘনিষ্ট সহযোগীও এতে জড়িত বলে নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্লেষকরা ধারণা করছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সম্মতি ব্যতিত এতো বড় কাজ তার ঘনিষ্ঠ লোক করতে পারেন না।
রাশিয়া, ক্রিমিয়াকে নিজেদের অংশ করে নেওয়ার পর ব্যাংক রোশিয়া নামের ওই ব্যাংকের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ব্যাংকটি কিভাবে অর্থ পাচার করে আসছিল তা ফাঁস হওয়া নথির মাধ্যমেই প্রথম জানা যাচ্ছে।
মোস্যাক ফনসেকা অবশ্য বলছে, গত চার দশকে তাদের কাজ নিয়ে কোনো সমালোচনা হয়নি। কোনো ফৌজদারি মামলার মুখেও তাদের পড়তে হয়নি।
ইন্টারন্যাশনাল কনসোর্টিয়াম অফ ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টস (আইসিআইজে)-এর পরিচালক জেরার্ড রাইল বলেন, গত ৪০ বছরে মোস্যাক ফনসেকার দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের দলিল এসব নথি।
‘এসব নথির যে গুরুত্ব, তাতে আমার মনে হয়, এটাই হবে বিশ্বে গোপন নথি ফাঁসের সবচেয়ে বড় ঘটনা’।
পানামার এসব নথি আলোচিত উইকিলিকস ও মার্কিন হুইসেল ব্লোয়ার এডওয়ার্ড স্নোডেনের ফাঁসকৃত নথির তুলনায় পরিমাণে অনেক বেশি।
এই নথিগুলো অজ্ঞাত সূত্র থেকে একটি জার্মান পত্রিকার হস্তগত হয় এবং তারা তদন্তমূলক সাংবাদিকতা বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনসোর্টিয়ামে এটি প্রকাশ করে। তবে নথিগুলোর সংগ্রাহক ও প্রকাশকারীর নাম এখন পর্যন্ত জানা যায়নি।
সূত্র: বিবিসি