তেলের দরের সঙ্গে কমেছে রেমিটেন্সও
ঢাকা: বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের অব্যাহত দরপতনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে রেমিটেন্সেও, যা বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম প্রধান খাত।
বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই অঙ্ক গত মাস ডিসেম্বরের চেয়ে ১২ দশমিক ২৪ শতাংশ কম। আর গত বছরের জানুয়ারির চেয়ে ৭ দশমিক ৩৪ শতাংশ কম।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম অস্বাভাবিক কমে যাওয়ার প্রভাবেই রেমিটেন্সের এই নিম্নগতি বলে মনে করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ফরেক্স রিজার্ভ অ্যান্ড ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী ছাইদুর রহমান।
তিনি মঙ্গলবার বলেন, “আমাদের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে সৌদি আরব, কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে। বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমে যাওয়ায় তেল উত্তোলনকারী প্রধান এই দেশগুলোর অর্থনীতি সঙ্কটের মুখে পড়েছে।
“এতদিন এই দেশগুলোতে আমাদের প্রবাসীরা ওভারটাইম করে বাড়তি উপার্জন করতেন। সেটা দেশে পাঠাতেন। এখন আর সেই কাজ পাচ্ছেন না তারা। সঙ্কটে পড়ে ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে ওই দেশগুলো।”
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় এক কোটি বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত আছেন। এর মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি আছেন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে।
একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স আসে সৌদি আরব থেকে। গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স এসেছে দেশটি থেকে।
মধ্যপ্রাচ্যের এই শ্রমিকদের পাঠানো অর্থেই গতিশীল বাংলাদেশের অর্থনীতি মধ্যপ্রাচ্যের এই শ্রমিকদের পাঠানো অর্থেই গতিশীল বাংলাদেশের অর্থনীতি মোট রেমিটেন্সের ৬৫ শতাংশই পাঠান মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে থাকা বাংলাদেশিরা।
এছাড়া রিংগিতের দরপতনের কারণে মালয়েশিয়া থেকেও কম রেমিটেন্স আসছে বলে জানান ছাইদুর রহমান।
তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোট ওপেকের তথ্য অনুয়ায়ী, মঙ্গলবার (২ ফেব্রুয়ারি) প্রতি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল ২৯ দশমিক ৬৯ ডলারে বিক্রি হয়েছে।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে তেলের দর কমছে। এই সম্প্রতি দর ২২ দশমিক ৪৮ ডলারেও নেমে এসেছিল।
তেলের এই অব্যাহত দরপতনে বিশ্ব অর্থনীতিতে চলছে অস্থিরতা। বড় পুঁজিবাজারগুলোকেও দরপতন দেখতে হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে গত জানুয়ারিতে ১১৫ কোটি ২০ লাখ ডলারের রেমিটেন্স এসেছে। আগের ডিসেম্বরের তুলনায় যা ১৬ কোটি ৬ লাখ ডলার এবং গত বছরের একই মাসের তুলনায় ৯ কোটি ১৩ লাখ ডলার কম।
জানুয়ারিতে রেমিটেন্স কমায় অর্থবছরের হিসেবে সাত মাসের হিসাবেও কমেছে।
চলতি ২০১৫-১৬ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি প্রবাসীরা সবমিলিয়ে ৮৬৪ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন।
২০১৪-১৫ অর্থবছরের একই সময়ে পাঠানো অর্থের পরিমাণ ছিল ৮৭৩ কোটি ডলার।
এ হিসেবে এই সাত মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ০৫ শতাংশ রেমিটেন্স কম এসেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিটেন্স সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।
২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা কমে ১৪ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে।
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে অবশ্য বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠান প্রবাসীরা।
প্রবাসীদের পাঠানো অর্থ কমলেও রপ্তানি আয়ের ইতিবাচক ধারার কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে।
মঙ্গলবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২৭ দশমিক ২৫ বিলিয়ন ডলার।এদিয়ে আট মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব।