সামনের আর্থিক পরিণতি খুব ভয়াবহ হবে : প্রধান অর্থনীতিবিদ বিশ্বব্যাংক
ডেস্ক: নভেল করোনাভাইরাস অমুসরিম বিশ্বকে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে। কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে না পারলে ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকট তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কারমেন রেইনহার্ট এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে। খবর ব্লুমবার্গ।
ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে রেইনহার্ট বলেছে, ‘মহামারীর প্রভাবে এখনো আর্থিক সংকট শুরু হয়নি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটে রূপ নেয়ার পথে রয়েছে, যার আর্থিক পরিণতি খুব ভয়াবহ হবে।’ রেইনহার্টের মতে, করোনার প্রভাব সহসাই শেষ হবে না। তার ভাষায়, ‘সামনে আমাদের অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে।’
রেইনহার্টের এই সতর্কবার্তাকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গেই বিবেচনা করতে হবে। কারণ আর্থিক সংকট নিয়ে গভীর ধারণা রয়েছে তার। চলতি বছরের জুনে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদের দায়িত্ব নেয়া রেইনহার্ট আর্থিক সংকট নিয়ে গবেষণা করেছেন। হার্ভার্ডের সহকর্মী কেনেথ রোজফকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৯ সালে একটি বই লেখে সে। ‘দিস টাইম ইজ ডিফারেন্ট: এইট সেঞ্চুরিজ অব ফিন্যান্সিয়াল ফলি’ শিরোনামের ওই বইটির বিষয়বস্তু ছিল ২০০৭-০৮ সালে বিশ্বব্যাপী তৈরি হওয়া আর্থিক সংকট।
করোনাকালীন পরিস্থিতিতে ইল্ডের পরিমাণ কম রাখতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বন্ড ক্রয় কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর এ উদ্যোগ আদতে ‘জিরো-সাম গেম’ কিনা, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রেইনহার্ট বলেন, ‘এটা একটা যুদ্ধ। যেকোনো যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেই সরকারগুলো সামরিক ব্যয়ে যথাসম্ভব অর্থায়ন করে থাকে। বর্তমানেও পরিস্থিতি অনেকটা তেমনই। আমরা এখন যে অবস্থায় রয়েছি, তাকে কোনোভাবেই স্থিতিশীল বলা যাবে না।’
মহামারীর কারণে অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে চাপের মধ্যে রয়েছে দরিদ্র ও উদীয়মান দেশগুলো। ঋণের ভারে জর্জরিত দেশগুলোকে জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ পরিশোধের সময়সীমা আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু সর্বশেষ বৈঠকে জি২০ নেতারা এ সময়সীমা অন্তত ২০২১ সালের প্রথমার্ধ পর্যন্ত বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে যে পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হতো, তার প্রায় ৬০ শতাংশেরই পাওনাদার চীন। গত আগস্টে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ডেভিড ম্যালপাস জানায়, চীন উদীয়মান দেশগুলোকে বিপুল পরিমাণ ঋণ দিয়েছে, যেগুলোর শর্ত পরিষ্কার নয়। এছাড়া এসব ঋণ দেয়া হয়েছে এমন সুদহারে, যা ওইসব দেশ পরিশোধ করার সক্ষমতা রাখে না।
সেই চীন কেন ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধির এ উদ্যোগে যুক্ত হচ্ছে না—এমন প্রশ্ন করা হলে রেইনহার্ট বলেছে, ‘চীন যে একেবারেই যুক্ত নয়, তা কিন্তু নয়। আসলে এ কার্যক্রমে তাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। কিন্তু সম্পূর্ণরূপে নয়। দেশটির শীর্ষ ঋণদাতা চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এখনো এ উদ্যোগে সাড়া দেয়নি। বেসরকারি খাতের ঋণদাতারাও এগিয়ে আসেনি। আমরা চীনের পূর্ণ সম্পৃক্ততা প্রত্যাশা করেছিলাম। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে তেমনটি দেখা যায়নি।’
উল্লেখ্য, দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তিতে দরিদ্র দেশগুলোর ঋণ পুনর্গঠনের লক্ষ্যে একটি সাধারণ কাঠামো গ্রহণের পরিকল্পনা করেছিল শীর্ষ অর্থনীতিগুলোর ফোরাম জি২০। কিন্তু চীন ঋণ পরিশোধ স্থগিত নিয়ে একটি সাধারণ কাঠামো গ্রহণে আপত্তি জানিয়েছে। চীনা কর্মকর্তারা বলছে, সাধারণ কাঠামোর মাধ্যমে এটা করতে তারা প্রতিশ্রুতি দিতে পারছে না। কারণ এটা চীনা আইনের পরিপন্থী। সমাধান হিসেবে তারা বলেছে, প্রতিটা দেশ তাদের নিজস্ব আইনের মধ্যে থেকে আলাদাভাবে কাজটি করতে পারে।